কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে চরকিতে মুক্তি পেয়েছে ‘প্রিয় সত্যজিৎ’। প্রসূন রহমান পরিচালিত এই ট্রিবিউট ফিল্মটি এর আগে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়ে প্রশংসা ও পুরস্কার অর্জন করেছে। এবার দেশের দর্শকেরা এটি দেখতে পারবেন জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চরকির সাবস্ক্রাইবারেরা সিনেমাটি দেখতে পারবেন নিয়মিত নিয়মেই। আর যাঁরা সাবস্ক্রাইবার নন, তাঁরা ৩৫ টাকা দিয়ে দেখে নিতে পারবেন সিনেমাটি। এ জন্য তাঁদের চরকি অ্যাপটি ফোন বা পিসিতে ইনস্টল করে লগইন করতে হবে ফোন নম্বর বা ই-মেইল অ্যাড্রেস দিয়ে। ‘বাই টিকিট’ অপশনের ভেতরে বা হোম পেজে থাকা ‘প্রিয় সত্যজিৎ’ সিনেমাটিতে ক্লিক করলেই চলে আসবে পেমেন্ট অপশন। পছন্দের পদ্ধতিতে টাকা জমা দিয়ে দেখে নেওয়া যাবে সিনেমাটি। একই পদ্ধতিতে ভারতের দর্শকেরা ৩৫ রুপিতে এবং বাংলাদেশ-ভারত ছাড়া অন্য দেশের দর্শকেরা ১ দশমিক ৯৯ ডলারে দেখতে পারবেন সিনেমাটি।গল্প ও নির্মাতা–ভাবনা
‘প্রিয় সত্যজিৎ’-এর কাহিনি গড়ে উঠেছে তিন সময়ের তিন চলচ্চিত্র নির্মাতাকে ঘিরে। প্রথমজন সত্যজিৎ রায়—যিনি উপস্থিত না থেকেও ছবির প্রতিটি অনুভবে বিরাজমান। বাকি দুই নির্মাতা দুই প্রজন্মের প্রতিনিধি।প্রবীণ নির্মাতা আসিফ মাহমুদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রয়াত গুণী অভিনেতা আহমেদ রুবেল এবং নবীন নির্মাতা অপরাজিতা চরিত্রে রয়েছেন মৌটুসী বিশ্বাস। আরও অভিনয় করেছেন পংকজ মজুমদার, সাইদ বাবু, সঙ্গীতা চৌধুরী, লাবণ্য চৌধুরী প্রমুখ। নির্মাতা প্রসূন রহমানের ভাষ্যে ‘এটি কোনো নির্দিষ্ট সময়ের ছবি নয়। সত্যজিৎকে সঙ্গী করে সাহিত্যের প্রতি, সিনেমার প্রতি, শিল্পের প্রতি ভালোবাসা জানানো এক নিবেদন। এটি আমাদের “লাভ-লেটার টু সিনেমা”।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পটভূমিতে সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে বড় কোনো উদ্যোগ চোখে না পড়ায় তিনি নিজ উদ্যোগে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। চরকির হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ফয়সাল রহমান বলেন, ‘“প্রিয় সত্যজিৎ”চরকিতে বিশেষ উদ্যোগে মুক্তি পেয়েছে। কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়কে শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি যেন সবার দেখার সুযোগ থাকে, সে জন্য আমরা সিনেমাটি ট্র্যানজেকশনাল ভিডিও অন ডিমান্ড বা টিভিওডি পদ্ধতিতে মুক্তি দিয়েছি। এই অপশনে আরও ৩টি কনটেন্ট রয়েছে। আশা করছি, ধীরে ধীরে এ তালিকা দীর্ঘ হবে।’সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা ছিল কিশোরগঞ্জে। সেখানকার মসূয়ায় সত্যজিৎ রায়ের দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বাড়িসহ আরও দুটি জায়গায় এবং পুরান ঢাকার একটি বাড়িতে হয়েছে সিনেমাটির শুটিং।
চলচ্চিত্রের কবি সত্যজিৎ রায়
১৯২১ সালের আজকে দিন, অর্থাৎ ২ মে, কলকাতার এক সাহিত্যপাগল পরিবারে জন্ম নেন সত্যজিৎ। তাঁর দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন বাংলা শিশুসাহিত্যের পথিকৃৎ, ‘টিকটিকি’, ‘চাঁদের পাহাড়’-এর মতো পত্রিকার জনক। বাবা সুকুমার রায় ছিলেন ‘আবোল তাবোল’-এর কবি। শৈশবেই তাঁর মধ্যে শিল্প ও সাহিত্যের বীজ রোপিত হয়।১৯৯২ সালে মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি পান একাডেমি অনারারি অ্যাওয়ার্ড (অস্কার)—একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্য প্রথম ও অন্যতম। একই বছর তাঁকে দেওয়া হয় ভারতরত্ন, দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল, কলকাতায় মৃত্যু হয় এই চলচ্চিত্র কবির। কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া কাজ, দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গি আজও তরুণ নির্মাতাদের অনুপ্রেরণা দেয়। সিনেমা দেখতে দেখতে যাঁরা সিনেমার ভাষা শেখেন, সত্যজিৎ রায় তাঁদের প্রথম শিক্ষক।(মোঃ আব্দুল বাতেন)