হাসিনাসহ আসামিদের মৃত্যুদণ্ড ও তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়ার আর্জি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহত পরিবারগুলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামিদের সব সম্পত্তি বিক্রি করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আর্জি জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পাশাপাশি হাসিনাসহ আসামিদের সবোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আর্জি জানিয়েছেন প্রসিকিউশন। বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের পঞ্চম দিন, অর্থাৎ সমাপনী যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। এদিন আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের মধ্যে তৃতীয় অভিযোগের স্বপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। এর আগে মঙ্গলবার প্রথম ও দ্বিতীয় অভিযোগের স্বপক্ষে যুক্তিতর্ক এবং বুধবার চতুর্থ ও পঞ্চম অভিযোগের স্বপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তাজুল ইসলাম।

ট্রাইব্যুনালে তাজুল বলেন, ‘আসামি শেখ হাসিনার নির্দেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়। যদি প্রতিটি হত্যার জন্য একবার করেও ফাঁসিও দেয়া হয়, তাহলে হাসিনার ১৪০০ বার ফাঁসি দিতে হবে। কিন্তু সেটি সম্ভব নয়। সুতরাং ট্রাইব্যুনালের কাছে আর্জি, আসামিদের প্রতি যেন কোনো অনুকম্পা না দেখানো হয়। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ছিলো সকল অপরাধের নিউক্লিয়াস। জুলাই আন্দোলনে সংগঠিত হত্যাযজ্ঞের প্রাণ ভোমরা। অপরাধীরা মনে করতো হাসিনাকে খুশি করতে পারলেই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত।’

তাজুল বলেন, ‘গত সাড়ে নয় বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় একমাত্র টার্গেট ছিল ২০৪১ সাল পর্যন্ত তার পরিবার ও দলের শাসন ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা। বাংলাদেশে তার কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ না রাখা। যারাই তার বিপক্ষে প্রতিবাদ বা প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাদেরকে নির্মূল করা।’ তিনি বলেন, ‘কমান্ড স্ট্রাকচারের শীর্ষে বসে শেখ হাসিনা নিজে সবগুলো অপরাধ সংগঠনের জন্য হুকুম দিয়েছেন—যেটা তার কথোপকথন টেলিফনিক নির্দেশ। ফজলে নূর তাপস, মাকসুদ কামাল, হাসানুল হক ইনু ও কর্নেল রাজিবের সঙ্গে হাসিনার টেলিফোন কনভার্সেশন—এগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি তার জিঘাংসা মনোবৃত্তি ক্লিয়ারলি বলেছেন। যেই ছাত্রদেরকে, তারা যেহেতু রাজাকার হতে চেয়েছে অর্থাৎ এই ছেলেগুলো চেয়েছিল প্রতিবাদ করতে, তাদেরকে রাজাকার ট্যাগ দেয়া হলো। তারপরে বলেছেন, যেহেতু রাজাকার হতে চেয়েছেন, তাদেরকে রাজাকারদের মতো ফাঁসি দেবো। তারপর বলেছেন, ইংল্যান্ডে ছাত্র আন্দোলনকারীদের হত্যা করা হয়েছে, আমি এদেরকে হত্যা করব। এরপরে লেথাল ওয়েপন ব্যবহার করে তাদেরকে ওপর থেকে হেলিকপ্টার দিয়ে ক্লিয়ার করা অর্থাৎ তাদেরকে হত্যা করে নির্মূল করার নির্দেশ দেয়া হলো। বোম্বিং করার কথা বলা হলো। প্যারাড্রুপার নামানোর কথা বলা হলো। হাসপাতালে গিয়ে হাসিনা বললেন—আহতদেরকে যেন চিকিৎসা না দেয়া হয়। রিলিজ নিয়ে অন্য জায়গায় যাতে ট্রিটমেন্ট করতে না পারে—সে ব্যপারে নিদর্শনা দেয়া সবাই ছিলো হাসিনার জিঘাংসার অংশ।’

এদিকে, যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আজকে প্রসিকিউশনের পক্ষে আমাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। আজকে সমাপনী দিবসে যুক্তিতর্কের মধ্যে আমরা আইনগত যুক্তিগুলো তুলে ধরেছি, ইন্টারন্যাশনাল ল ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন রেগুলেশনস কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল এবং বাংলাদেশের ল-এর আলোকে। জুলাই-আগস্টে সংগঠিত যে মানবতাবিরোধী অপরাধ, এটা যে ওয়াইড স্প্রেড এবং সিস্টেমটিক এবং আসামিরা তাদের জ্ঞাতসারে এই অপরাধগুলো করেছিলেন এবং কতটা নিষ্ঠুরভাবে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ইনভল্ভ করে এই অপরাধগুলো সংগঠিত করা হয়েছিল সেই বিষয়গুলো আমরা একটা একটা করে আদালতে তুলে ধরেছি। আন্তর্জাতিক আইনের নজিরগুলো তুলে ধরেছি এই জাতীয় ট্রাইব্যুনালের যে সমস্ত জাজমেন্টগুলো আছে কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির ব্যাপারে, জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের ব্যাপারে ওয়াইড স্প্রেড এবং সিস্টেমেটিক হওয়ার ব্যাপারে, ফরমার যুগসলাভিয়ার যে আইসিটি ওয়াই আইসিটি আর রুয়ান্ডা ট্রাইবুনাল আইসিসি এগুলো বিভিন্ন আদালতের সিমিলার ডিসিশন গুলো তুলে ধরে দেখিয়েছি যে আমাদের এখানে সংঘটিত অপরাধগুলো ইন্টারন্যাশনাল আইন অনুযায়ী তা কি পর্যায়ে আছে এবং সেগুলো ক্রাইমস এগেন্স হিউম্যানিটি হওয়ার ব্যাপারে সেগুলো যে কোয়ালিফাই করে সেগুলো তুলে ধরেছি।’ (ডেস্ক রিপোর্ট)।