গাজায় যুদ্ধ শেষ হয়নি: সেনা প্রত্যাহারের পরও ইসরায়েলের নতুন কৌশলে জ্বলছে আগুন

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ট্যাঙ্ক সরিয়ে নেওয়া বা যুদ্ধবিমানের গর্জন থেমে যাওয়ার মধ্যেও শেষ হয়নি। এই ভয়াবহ অভিযানে প্রাণ হারিয়েছে দশ-হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, ধ্বংস হয়েছে লাখো ঘরবাড়ি, আর প্রায় বিশ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, সবচেয়ে বড় বিপদ এখনো সামনে — কারণ ইসরায়েল যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এক নতুন রূপে, যেখানে আর তাদের সেনাবাহিনী লাগছে না।

ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞে সৃষ্ট শূন্যতার মধ্যে গড়ে উঠছে এক ভয়াবহ নতুন বাস্তবতা। গাজায় এখন উদ্ভব হচ্ছে বিভিন্ন সশস্ত্র মিলিশিয়া গোষ্ঠীর, যারা সামাজিক কাঠামোর পতন ও জনগণের তীব্র দুর্ভোগকে কাজে লাগাচ্ছে। একসময় যারা নিজেদের “অধিকারবিরোধী প্রতিরোধ” আন্দোলনের অংশ বলে দাবি করত, তারা এখন ক্রমেই নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধেই অস্ত্র ধরছে। মাতৃভূমির প্রতিরক্ষার বদলে এই গোষ্ঠীগুলো সহিংসতার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত, ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-যন্ত্রণাকে ব্যবহার করছে দলীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থে।

দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ গাজা একসময় শ্বাসরুদ্ধকর হলেও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ছিল নিজের ভেতরে। তখন মানুষ ভয় পেত ইসরায়েলি বিমান হামলার, কিন্তু প্রতিবেশীর বন্দুক বা অপরাধী চক্রের নয়। আজ সেই নিরাপত্তাবোধ বিলীন; ভয় এখন দুই দিক থেকে — দখলদার বাহিনীর হাত থেকেও, আবার নিজের সমাজের ভেতর থেকেও।

এই নতুন অস্থিরতার ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি দেখা গেছে সম্প্রতি গাজা সিটির সাবরা এলাকায় সাংবাদিক সালেহ আলজাফারাওয়ির হত্যাকাণ্ডে। মাত্র ২৮ বছর বয়সী এই তরুণ সাংবাদিক দীর্ঘদিন ধরে গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতা নথিবদ্ধ করছিলেন। তার সাহসী প্রতিবেদনের কারণে তিনি বারবার মৃত্যুর হুমকি পেয়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধবিরতির কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি গুলিতে নিহত হন — কোনো ইসরায়েলি ড্রোন বা সেনার হাতে নয়, বরং ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের গুলিতে।

এই হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করেছে যুদ্ধের নতুন রূপ — এক ভয়াবহ ছায়াযুদ্ধ, যেখানে ইসরায়েল তার সেনাবাহিনী ছাড়াই ফিলিস্তিনিদের একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে ভয়, অরাজকতা ও রক্তপাতের এমন এক দুষ্টচক্র, যা দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখছে সৈন্য ছাড়াই।

তথ্যসূত্রঃ আলজাজিরা।